ঢাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য একীভূত পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য সরকারকে দেয়া ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।
চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: ইউজিসি
সমস্যা নিরসনে সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা
মারিয়া আক্তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী ইউএনবিকে জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে সময় এবং অর্থ অপচয় হবে।
‘তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে আমার সহজেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে সহায়তা করবে এবং ভোগান্তি কমবে,’ বলেন মারিয়া।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও ইউজিসির এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৯ সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে: ইউজিসি
রংপুরের রাব্বিল ভূঁইয়ার মেয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী। তিনি ইউএনবিকে বলেন যে তাদের মতো মানুষের জন্য এটি স্বস্তির বিষয়।
তিনি বলেন, ‘সুপারিশ কার্যকর করা হলে এটি সত্যিই সহায়ক হবে।’
‘আমার মেয়ের ভর্তির জন্য এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য শহরে ঘোরাঘুরি করার অবস্থায় আমি নেই। এছাড়া শহর নিরাপদ না হওয়ায় আমি তাকে একাও ছাড়তে পারছি না। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে,’ বলেন তিনি।
সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সহায়ক হবে
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন ইউএনবিকে বলেন, সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তা স্বাগত জানানোর মতো একটি উদ্যোগ হবে।
তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি। তবে এটি ইউজিসির একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আনুপাতিকভাবে শিক্ষার্থী পেতে সহায়তা করবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বিবেচনা করে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’
সমন্বিত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার আগে এর আনুষ্ঠানিকতা নির্ধারণে ইউজিসি এপিইউবি’র সাথে আলোচনায় বসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন কবির হোসেন।
এইচএসসির ফল প্রকাশের আগে শিক্ষার্থী ভর্তি নয়: ইউজিসি
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি এ ব্যবস্থায় অংশ নেয় তবে এটি ফলপ্রসূ হবে। এ জন্য ইউজিসিকে একটি গ্রহণযোগ্য নিয়ম নিয়ে আসতে হবে।’
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল্লাহ ইউএনবিকে জানান, ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা তার মধ্যে অন্যতম।
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাতে ইউজিসি দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার সেটি সম্ভব হয়েছে,’ বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম করলে ছাড় নয়: ইউজিসি চেয়ারম্যান
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এসব বিষয় বিবেচনা করেই সুপারিশ করেছি।’
দেশের শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তে রাজি না হলেও ইউজিসি মার্চ মাসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে আলোচনায় বসে এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এ পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঢাকার ইউজিসি কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল্লাহ এবং দেশের ৩৪ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওই বৈঠকে অংশ নেননি।
গত ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত ইউজিসি’র এক বিবৃতি অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন জাতীয় দাবি: ইউজিসি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালগুলোর উপাচার্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে আগেই অস্বীকৃতি জানানোর কারণে এ সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থায় যোগ দিচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।